সবার উপরে মানুষ সত্য। এ কথা প্রমাণিত হলো আরও একবার। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে হিন্দু বৃদ্ধকে রক্ত দান করে ভ্রাতৃত্বের অনন্য নজির স্থাপন করলেন দুই মুসলিম যুবক। ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের। খবর হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার।
৭২ বছরের অরবিন্দ দে নদিয়ার নাকাশিপাড়া থানার উদয়চন্দ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা। তার পুত্রবধূ শ্রাবণী সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার শ্বশুরের রক্তেন গ্রুপ – ও পজিটিভ। হঠাৎ তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জানা যায়, তার শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা মারাত্মক হারে কমে গিয়েছে।
এ অবস্থায় কৃষ্ণনগরের শক্তিনগর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় অরবিন্দকে। চিকিৎসকরা জানান, বৃদ্ধের প্রাণ বাঁচাতে হলে অবিলম্বে অন্তত দুই ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। কিন্তু, গত শনিবার নানা জায়গায় দৌড়েও ও পজিটিভ গ্রুপের রক্ত জোগাড় করতে পারেননি অরবিন্দের বাড়ির লোকেরা। এমন একটি দুঃসময় তারা একটি ইমার্জেন্সি ব্লাড ডোনেশন গ্রুপের সন্ধান পান। যোগাযোগ করা হয় সেই গ্রুপের সঙ্গে।
সেই গ্রুপের মাধ্যমেই মহম্মদ হাসমাতুল্লা শেখ এবং জাহাঙ্গির আলম জানতে পারেন, এক বৃদ্ধের অবিলম্বে রক্তের প্রয়োজন। তারা সেই বৃদ্ধের জাতের খোঁজ নেননি। বদলে, রোববার সকাল হতেই তারা তাদের বাড়ি থেকে রওনা দেন কৃষ্ণনগরের উদ্দেশে। প্রথম জনকে আসতে হয় ৫০ কিলোমিটার দূর থেকে! আর দ্বিতীয়জনকে পাড়ি দিতে হয় ৩৫ কিলোমিটার পথ।
রোববারই এই দুই মুসলিম যুবক হিন্দু প্রবীণ অরবিন্দ দে-কে একবোতল করে মোট দুই ব্যাগ রক্ত দান করেন। রক্ত শরীরে প্রবেশ করতেই ক্রমে সুস্থ হয়ে ওঠেন অরবিন্দ। ভিনধর্মী দুই সহনাগরিকের কাছ থেকে এমন আত্মীয়তা পেয়ে আপ্লুত দে পরিবার। তারা বলছেন, এ সাহায্য কোনও দিনও ভুলবেন না তারা। চিরদিন ওই দুই যুবকের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবেন।
একদিকে, সংশোধিত ওয়াকফ আইনের প্রতিবাদে সহিংসতার আগুন ছড়িয়ে পড়েছে মুর্শিদাবাদে। সেই সহিংসতা মানুষের প্রাণ যেমন কেড়েছে, তেমনই অসংখ্য মানুষকে ভিটেমাটি ছাড়তেও বাধ্য করেছে। সেই প্রেক্ষাপটে কৃষ্ণনগরের এ ঘটনা সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং একান্ত কাঙ্ক্ষিত ছবি তুলে ধরল।