মাহমুুদুল হক আনসারী
ঈদ আনন্দ, খুশি বছর ঘুরে মুসলিমদের ঘরে ঘরে আসে। সারা দুনিয়ায় ঈদুল ফিতরের ঈদ আনন্দ বিশ্ব মুসলিমের ঘরে ঘরে জানান দেয়। রমজান মাসের রোজার শেষে রোজা পালনকারী মুসলিমরা এই খুশি উৎযাপন করে। ঈদ অর্থ খুশি আনন্দ। রোজা পালনকারীদের জন্য এই খুশি। একজন আরেকজনের সাথে কৌশল সালাম শুভেচ্ছা বিনিময় করে এই খুশি পালন করে।
সামর্থের মধ্যে নতুন জামা কাপড় আতর সুগন্ধি ব্যবহার করে ঈদের মাঠে যায়, দলবদ্ধ ভাবে ঈদের নামাজ আদায় করে। মোনাজাত করে, দোয়া করে, সেখানে নামাজের ইমাম ভাষন রাখেন। আরবিতে খুৎবা বা ভাষন দিয়ে থাকেন। সমবেত মুসল্লিরা সেই ভাষন মনোযোগে শ্রবন করেন। ভাষনের মর্মবাণি, সৌহার্দ্য, ভ্রাত্তিত্ব, ঐক্য, শৃঙ্খলা, শান্তি, ধর্মীয় অনুভূতি জাগরত করার মাধ্যমে ব্যাক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে আলোকিত করার ভাষন রাখেন। এই ভাষনের মাধ্যমে ঈদুল ফিতরের একটি ঐতিহাসিক সংস্কৃতি মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত আছে। দলবল নির্বিশেষে ভিন্ন চিন্তা চেতনার পার্থক্যের মধ্যেও এই ধর্মীয় সংস্কৃতি মূল্যবোধ এখনো চালু আছে। ঈদের আমেজ পারস্পরিক আনন্দ কিছুটা হলেও প্রচলিত রয়েছে। সালাম বিনিময়, কৌশল, সেমাই, সিন্নি, ফিন্নি হরেক প্রকারের আয়োজন হয়ে থাকে ঘরে ঘরে। কয়েকদিন পর্যন্ত এই আয়োজন আসা যাওয়া মুসলিম সমাজে দেখা যায়।
সামর্থ্যরে মধ্যে থাকা পরিবার ও মানুষগুলো বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করে জামা কাপড় আনুসাঙ্গিক ব্যবস্থাপনায় ঈদ খুশি পালন করে। পক্ষান্তরে সামর্থ্যহীন ব্যাক্তি পরিবার মানুষ নতুন জামা কাপড় ও আনুসাঙ্গিক খরচ সম্পন্ন করতে পারেনা। অভাব অর্থ সংকট পারিবারিক নানা অশান্তি তাদেরকে ঈদ উৎযাপন থেকে বিরত রাখে। সামাজিক অস্থিরতা, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা, অর্থনৈতিক সংকট, রাষ্ট্রিয় প্রতিবন্ধকতা এর জন্য বাঁধা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অসংখ্য পরিবার ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকে। রাজনৈতিক এই সংস্কৃতি ধারাবাহিক ভাবে চলে আসছে। গণতন্ত্র মানবাধিকার ন্যায় বিচারের কথা উচ্চারণ হলেও বাস্তবে প্রতিহিংসার ধারাবাহিক রাজনীতি অব্যাহত আছে। ফলে সেই সব পরিবারে নেই কোনো ঈদ খুশি সন্তানের জন্য কাদঁছে পিতা মাতা। পিতার জন্য কাদঁছে সন্তান। স্বামীর জন্য স্ত্রী, আত্মীয় স্বজন প্রতিবেশি। ফলে হাজার হাজার এই সব পরিবারে ঈদের খুশি আনন্দ নতুন জামা কাপড় অনুপস্থিত।
আবহমান কাল থেকে ঈদ উৎসব উদযাপন হচ্ছে। সাথে ব্যথা বিরহ যন্ত্রণা। সাথে নানা ঘটনা যন্ত্রণায় দগ্ধ অসংখ্য পরিবার। তাই প্রকৃত ঈদ খুশি আনন্দ অনেক ক্ষেত্রে যন্ত্রণা ও ব্যথা বেদনার কারণে। সামর্থের বাইরে হাজার হাজার পরিবার অর্থ সংকটে ঈদ খুশি ইচ্ছে মতো পালন করতে পারে না। দুস্থ অভাবী মানুষগুলো ঈদকে শুধু চোখ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে। তাদের পাশে বিত্তবান ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসা দেখতে চাই। ধণী গরিবের দুরত্ব বিশাল। বৈষম্য বহু ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সুষ্ট ব্যবস্থাপনা এখনো সমাজে বাস্তবায়ন হয়নি করা যায়নি। ভিক্ষুক, অনাথ, দুস্থ, অসহায় মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাস্তায় নামলেই ভিক্ষুক অসহায় মানুষ এক দুই টাকার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। পাশেই কোটি টাকা দামের গাড়ি, পাকা দালান কোটায় পুরো শহর ভরপুর। এক শ্রেণির স্বল্প সংখ্যক মাুনষের নিকট অর্থ জিম্মি হয়ে আছে। দেশের অর্থনীতির চাকা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ধনী দরিদ্রের দুরত্ব বাড়ছে। সেখানেই কিসের ঈদ কিসের আনন্দ। নুন আনতে পান্তা শেষ। দৈনন্দিন রুটি রুজির ব্যবস্থা যেখানে করা কঠিন সেখানে লাখ লাখ কোটি কোটি অসহায় দরিদ্র মানুষের কিসের ঈদ? তাই ঈদ আনন্দ কথায় বাস্তবে বহুদুর। সামাজিক শৃঙ্খলা, ন্যায় নীতি, অর্থনৈতিক সুষম বন্টন, ধনী গরিবের দেয়াল যে পর্যন্ত না শৃঙ্খলায় না আনা যাবে। সেই পর্যন্ত ঈদ আনন্দ উৎসব কথায় থাকবে বাস্তবে নয়। আসুন প্রকৃত ভালোবাসার ঈদ সমাজে প্রতিষ্ঠা করি। ইসলাম রোজার যে আবেদন মুসলিম সমাজে রয়েছে সেই দাবি ও আহবানকে প্রতিষ্ঠা করি।