মো. আবদুর রহিম
আল্লাহ তা’য়ালার সেরা সৃষ্টি মানবজাতি। এই মানবজাতি নানা ধর্মে-বর্ণে গোত্রে-সম্প্রদায়ে, নানা রং বর্ণে বিভক্ত। আমরা যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল, আসামী কিতাব, ফেরেস্তা ও কলেমার প্রতি ঈমান এনে মুসলিম হওয়ার সুভাগ্য অর্জন করেছি Ñ আমাদের ওপর ৫টি ফরজ কাজ নির্ধারিত আছে। তাহলো কলেমা, রোজা, নামায, হজ, যাকাত। হজ ও যাকাত এই দুইটি ফরজ কাজ পালনের দায়িত্ব স্বচ্ছল, স্বাবলম্বি ও অর্থবিত্তশালী মুসলমানদের উপর। যিনি অর্থবিত্তের মালিক তিনি যাকাত দেবেন ও হজ করবেন। দয়াময় আল্লাহর রহমত ও করুণার দ্বার সর্বক্ষণ খোলা। অনবরত নাজিল হতে থাকে কল্যাণের বারিধারা। আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর সৃষ্টির জন্য তাঁর রহমত ও দয়ার বিশেষ বিশেষ অফার ও সুবর্ণ সুযোগ প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের বিভিন্ন অফারের মাধ্যমে বান্দাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের জীবনের সব পাপ মুছে দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন এবং পুণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়ার সুসংবাদ ও দিয়েছেন আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য যে সকল নেয়ামত বা অফার দিয়েছেন ওইসবের শ্রেষ্ঠ এক সময় হলো হজ মৌসুম। হজ ও ওমরাহের মধ্যে রয়েছে কল্যাণ ও ফজিলত। ১) রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘হজ ও ওমরাহ পালনকারীরা আল্লাহ কাফেলা। তারা দোয়া করলে আল্লাহ কবুল করেন, ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করেন (নাসায়ি)’। হজ হলো শ্রেষ্ঠতম আমল ও অন্যতম একটি পূণ্যকর্ম। সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো শ্রেষ্ঠতম আমল কোনটি ? তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রসুলের প্রতি ইমান গ্রহণ করা’। বলা হলো, তারপর কী ? তিনি বলেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা’। বলা হলো তারপর কী ? তিনি বলেন, ‘বিশুদ্ধ হজ।’ (বুখারি, মুসলিম)। ৩) হজ হলো মানুষের জীবন পবিত্র করার অন্যতম উপায়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে হজ করল আর তখন নারী সম্পর্কিত পাপাচার এবং ইসলাম বহির্ভূত কোনো কাজে লিপ্ত হয়নি. সে তার মায়ের গর্ভ থেকে যেমন পুত পবিত্র ভূমিষ্ট হয়েছিল তেমনি পাপমুক্ত অবস্থায় আপন ঘরে প্রত্যাবর্তন করবে (বুখারি মুসলিম)।’ ৪) নিয়মিত হজ-ওমরাহ করা দারিদ্র বিমোচনের সহায়ক হয়। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা নিয়মিত হজ ওমরাহ পালন কর। কেননা নিয়মিত হজ ও ওমরাহ পালনের মাধ্যমে অভাব দূর হয় এবং তা সব পাপ মুছে দেয়, যেভাবে হাপর (অগ্নি উত্তাপের যন্ত্র) লোহার মরীচিকা বিদূরন করে দেয় (তিরমিজি)।’ ৫) বিশুদ্ধ হজের বিনিময় হলো জান্নাত। রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘একটি ওমরাহ পর আরেকটি ওমরাহ করা হলে তা মধ্যবর্তী সময়ের যাবতীয় পাপের কাফফারা হয়ে যায়। আর বিশুদ্ধ হজের একমাত্র বিনিময় হলো জান্নাত (তিরমিজি, আহমদ)।’ ৬) হজ মুসলমানদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মিলনমেলা (সুরাবাকারা, আয়াত-১২৫)। পবিত্র ইসলাম ধর্মে প্রতিদিন ৫ বার, সপ্তাহের শুক্রবার ও একদিন ও বছরে দুই ঈদের দুই দিন মুসলমানের দেখা সাক্ষাৎ, একে অপরের খবরাখবর, সালাম, আদান-প্রদান এবং একে অপরের সুখ দুঃখের বিষয় সমূহ অবহিত হওয়া এবং একে অপরকে সহযোগিতা করার রীতিনীতি রয়েছে। প্রতিটি মুসলমান জীবনে অন্তত একবার হজের মাধ্যমে বিশ^ মহাসমাবেশে উপস্থিত হওয়ার বিধান রয়েছে। হজে বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে মুসলমানরা ছুটে আসে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায়। পবিত্র হজে বর্ণ-ভাষার বৈষম্য নেই। নেই ধনী-গরিবের কোনো পার্থক্য। পবিত্র হজের মাধ্যমে ধৈর্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও ঐক্যের বন্ধনের শিক্ষার গ্রহণ করা যায়। মানুষ সব পার্থক্য ভেদাভেদ ভুলে আরাফাত ময়দানে সবার মুখে একসঙ্গে উচ্চারণ হয় আল্লাহর প্রশংসা ও একাত্ববাদের ধ্বনি। ৭) হজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ও একটি ফজিলত হলো, ইসলামের ঐতিহাসেক স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলো দেখার প্রদর্শনের সুযোগ লাভ এবং মসজিদে হারাম, হাজরে আসওয়াদ কাবার দরজা মুলতাজাম, মাকামে ইবরাহিম, সাফা-মারওয়া, মিনা, আরাফাহ ও মুজদালিফার মতো বরকতপূর্ণ স্থানগুলোয় দোয়া ও জিকিরের মাধ্যমে ইহ ও পরকাল ধন্য করার অফুরন্ত সুযোগ। যার ফলে প্রতিটি মোমিন মুসলমান অন্তরে হজ পালনের গভীর আগ্রহ লালন করে। তবে যাদের এ প্রত্যাশা পুরণ হয়নি, তাদের জন্য সুসংসবাদ হিসেবে রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজর নামায আদায় করবে। এরপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহর জিকি করবে, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে তার জন্য পরিপূর্ণ-পরিপূর্ণ-পরিপূর্ণ হজও ওমরাহ পালনের বিনিময় নিহিত রয়েছে (তিরমিজি)।’ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে হজ ওমরাহ পালনের তৌফিক নজিব করুন, আমিন। সাধারন সম্পাদক বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চারনেতা স্মৃতি পরিষদ
মোবাইল : ০১৭২৭-৩০৬১৩২